না ফেরার দেশে চলে গেলেন প্রকৌশলী আবু জাফর

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি-
মুক্তিযুদ্ধের একজন নিঃস্বার্থ নীরব যোদ্ধা প্রকৌশলী হাজি মো: আবু জাফর ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। বুধবার বাংলাদেশ সময় ভোর আনুমানিক ৫.০০ টায় কানাডার অটোয়ায় মাগরীবের নামাজরত অবস্থায় হার্ডঅ্যাটাক জনিত কারণে ইন্তেকাল করেছেন তিনি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৭ বছর। তিনি ১৯৪৬ সালের ১৯ শে ডিসেম্বর ঝিনাইদহ জেলার তেঁতুলবাড়িয়া গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি দুই সন্তান, স্ত্রী, ভাইবোনসহ অসংখ্য বন্ধু-বান্ধব ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। পরিবারের পক্ষ থেকে তার বড় ছেলে সুশানিন জাফর মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেন। বৃহস্পতিবার কানাডার অটোয়াতে উনার নামাজের জানাযা ও দাফন সম্পন্ন হয়। উনার পুত্র সুশানি তার পিতার আত্মার মাগফিরাত কামনা ও সকলের নিকট দোয়া প্রার্থনা করেছেন।
পরিবার ও স্বজনরা জানায়, মুক্তিযোদ্ধা হাজী আবু জাফর ১৯৬৯ সালে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে পাস করার পর পাবনা জেলার ইশ্বরদীতে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের এসিসন্টেন্ট ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযোদ্ধা চলাকালীন সময়ে একজন দক্ষ ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। মুক্তিযুদ্ধাকালীন সময়ে মুক্তিযোদ্ধাদের খবরাখবর আদান প্রদানের জন্য রেডিও ট্রান্সমিটার ও রিসিভার এবং ওয়াকিটকি খুবই প্রয়োজন হয়ে পড়েছিল। এই প্রয়োজনীয় যন্ত্রটি নির্মাণে তদকালীন বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলী আবু জাফর এবং প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক হাসিবুর রহমান রেডিও ট্রান্সমিটার তৈরীতে এগিয়ে আসেন। এ সময় তাদের এই কাজে সহযোগিতা করেন কুষ্টিয়া আওয়ামী লীগের নেতা আলী রেয়াজ, ইন্ডিয়া রেডিও প্রোডাক্টস এন্ড কন্ট্রোল নামের রেডিও নির্মাতা প্রতিষ্ঠান। আর্থিক সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসে কলকাতার বাংলাদেশ সহায়ক সমিতি এবং বগুড়া সম্মিলনী নামের দুটি প্রতিষ্ঠান। তরুন এই প্রকৌশলীর নিরালস প্রচেষ্ঠায় এবং তৎকালিন কলকাতার বাংলাদেশ রাষ্ট্রদূত হোসেন আলীর সার্বিক সহযোগিতায় খুব দ্রুততার সাথে তারা তৈরী করতে সমর্থ হন হাই-ফ্রিকয়েন্সির প্রায় ৪০টি ট্রান্সমিটার, রিসিভার ও ৫০ টি ওয়াকিটকি। তাদের তৈরী ট্রান্সমিটার ও রিসিভার রেঞ্জ ছিল ৩০/৪০ মাইল এবং ওয়াকিটকির রেঞ্জ ছিলো ৮/১০ মাইল। তাদের তৈরী ট্রান্সমিটার ও ওয়াকিটকি মুক্তিযুদ্ধে বিভিন্ন সেক্টরে ব্যবহৃত হয়। ১৯৭১ সালের আগস্ট মাসে বেনাপল সীমান্তে পাকিস্থানী বাহিনীর ছাউনি উড়িয়ে দেওয়ার সাফল্যের কথা ক্যাপ্টেন হাফিজ তাদের নির্মিত ট্রান্সমিটারের মাধ্যমে সদর কমান্ডে প্রেরণ করেছিলেন। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর কিছুদিন তিনি বিদ্যুৎ প্রটেকশন ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে লিবিয়াতে কর্মরত ছিলেন। এরপর তিনি স্বপরিবারে কানাডাতে চলে যান এবং মৃত্যুর আগ পর্যন্ত কানাডা সরকারী পাওয়ার গ্রীডের সিনিয়র কনসালটেন্ট হিসাবে কর্মরত ছিলেন। তিনি ঝিনাইদহের মানুষের কথা ভুলে যাননি। তাই ঝিনাইদহের তরুন ছেলে- মেয়েদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে এসকিউএস গ্লোবাল সলিউশন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ, ফ্রিতে কম্পিউটার প্রদান ও অনলাইনে চাকুরির ব্যবস্থায় ভূমিকা রাখেছেন। বর্তমানে ঝিনাইদহে প্রায় ৪০ জন ছেলে মেয়ে উনার প্রতিষ্ঠান কর্মরত আছেন। এছাড়াও তিনি সামাজিক অনেক কর্মকান্ডের সাথে নিজেকে সম্পৃক্ত রেখেছিলেন। বীর এই মুক্তিযোদ্ধা এবং সমাজসেবক একরকম নিরবেই চলে গেলেন। এই নিঃস্বার্থ মুক্তিযোদ্ধার কথা এবং তার জন্মস্থান ঝিনাইদহ ও তেুঁতলবাড়িয়া গ্রামের অগনিত মানুষ এবং বাঙ্গালী জাতি চিরদিন স্মরণে রাখবে।
শেয়ার করতে ক্লিক করুন

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top