নিজস্ব প্রতিবেদক:
ঝিনাইদহ-৪ আসনে ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পূননির্বাচিত হয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক এমপি আনোয়ারুল আজিম আনার। নির্বাচনের দিনেই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অমিত সিকদার বিশুকে পিটিয়ে ৪ হাত-পা জখম করা হয়। আহত বিশুকে প্রথম কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পরে যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। গতকাল পর্যন্ত বিশুকে নির্যাতনের বিষয়ে মামলা রেকর্ড হয়নি থানায়। এর মধ্যে গতকাল সকালে উপজেলার সাঁকোর বাওড় থেকে প্রায় অর্ধকোটি টাকার মাছ জোরপূর্বক ধরে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে এমপি আনারের সমর্থকদের বিরুদ্ধে। বাওড়ের ইজারাদার রাসেল রানা গতকাল শুক্রবার সকালে পুলিশের জরুরি সেবা ৯৯৯’এ ফোন করলেও পুলিশের কোন সহযোগিতায় পায়নি বলে সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেছেন। এই বিষয়ে কাষ্টভাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আয়ুব হোসেন খান বলেন, আমি ও বাওড়ের ইজারাদার রাসেল দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থন করায় এমপি আনারের সমর্থকরা জোট করে বাওড়ের মাছ ধরে নিয়েছে। পুলিশের জরুরি সেবার নাম্বারে কল করেও কেন ভুক্তভোগীকে সহায়তা করা হয়নি এমন প্রশ্ন করা হলে কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবু আজিফ বলেন, এই বাওড় নিয়ে আদালতে মামলা চলমান। সমিতির সংখ্যা গরিষ্ঠ সদস্যরাই মাছ ধরেছে। সমিতির সদস্যদের নিজেদের মধ্যেই ঝামেলা। সমিতির সাধারণ সম্পাদকও মাছ ধরার পক্ষে। এই কারণে পুলিশ যায়নি। এবিষয়ে বিস্তারিত ইউএনও ম্যাডাম বলতে পারবেন। এই বাওড়ে সাব লিজ দেওয়া নিয়ে অনেক ঝামেলা আছে। এই বিষয়ে কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইসরাত জাহান বলেন, সমিতির সদস্যরা নিজেরাই মাছ ধরেছেন। মাছ ধরার পক্ষে সমিটির সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যরা রয়েছে। তাদের নিজেদের মধ্যে ঝামেলা থাকলে আমরা কি করবো। সেখানে প্রাণহানি ও বড় রকমের কোন ঝামেলা হতে পারে এমন কোন গোয়েন্দা তথ্য আমাদের কাছে ছিলো না। সেই কারণে আমরা ঘটনাস্থলে যায়নি। এর আগেও এই বাওড় নিয়ে ঝামেলা হয়েছে তখন আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে সমাধান করেছি। রাসেল রানার মাছ চুরি হয়ে গেলে তিনি মামলা করুক। ভুক্তভোগী মথনপুর মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লি. এর সভাপতি রাসেল রানা বলেন, দুই বছর আগে আব্দুর রশিদ খোকন নামের এক বিএনপি নেতা এমপির ছত্রছায়ায় থেকে জোর পূর্বক আমার কাছ থেকে বাওড়ের সাব লিজ লিখে নেয়। কিন্তু আমি এই ঘটনা নিয়ে আদালতে মামলা করি। বিজ্ঞ আদালত আমার পক্ষে রায় দিয়েছে। আমার ইজারার মেয়াদ ১৪৩১ সালের ৩০ চৈত্র পর্যন্ত বৈধ। এর আগেও চক্রান্ত করে বাওড় ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু আদালতে মামলা করে প্রতিকার পেয়েছি। বর্তমানে নির্বাচনের পরে আবার চক্রান্ত শুরু করেছে। নলডাঙ্গার কালাম মেম্বার, বারোবাজারের মনির মেম্বার, বিকাশ, অনন্ত, অনিল, অসিত, জামিনি, সবুল, শৈলেন, বিদ্যুৎ, রতন, শ্যামল ও সুফলসহ ১৫/২০ জন মিলে মাছ ধরেছে। যারা কেউ সমিতির সদস্য নয়। সমিতির সদস্যদের সংখ্যাগরিষ্ঠতার যে কথা বলা হচ্ছে সেখানে মাছ ধরার বিষয়ে সভা ও রেজুলেশন কিছুই করা হয়নি। জোর করেই প্রায় ৫০/৬০ লাখ টাকার মাছ ধরে নেওয়া হয়েছে। আনোয়ারুল আজিম আনার আবার এমপি নির্বাচিত হওয়ার পরে স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে কাজ করা অনেকেই এলাকা থেকে গা ঢাকা দিয়েছে। যারা এলাকায় আছে তারা কোন টু-শব্দও করছে না। আমি মাছ ধরার সময় গেলে আমাকে প্রাণে মেরে ফেলতো। তাই আমি পুলিশের জরুরি সেবার নাম্বার ৯৯৯’এ ফোন দিয়েছিলাম। আদালতের নির্দেশ ও জেলা প্রশাসনের বৈধ কাগজ থাকা সত্ত্বেও আমি পুলিশের সহায়তা পায়নি। আমি এই বিষয়ে মামলা করবো। তিনি আরও বলেন, এর আগে আদালত বাওড়ের মাছ ধরার সময় বাওড়ের সভাপতি সাধারণ সম্পাদকসহ সদস্যদের সবার উপস্থিত থাকতে বলেন। সমিতির কিছু সদস্যদের ব্যবহার করে নির্বাচনী জের হিসেবে জোরপূর্বক এই মাছ ধরা হয়েছে। রাসেল রানার অভিযোগ, তার ৫০/৬০ লাখ টাকার মাছ জোর পূর্বক ধরে নিলেও এখানে আইন লঙ্ঘন দেখছেন না ইউএনও এবং ওসি। এদিকে গত বুধবার ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক এস.এম. রফিকুল ইসলাম হরিণাকুণ্ডুতে এক সভায় নির্বাচনী সহিংসতা বন্ধে হুঁশিয়ারি দেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেও নির্বাচনী সহিংসতা বন্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি দেন।

শেয়ার করতে ক্লিক করুন

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top